A-Taxing-Process

কর অব্যাহতি বা হ্রাসকৃত করহারের শর্তাবলি  

কর অব্যাহতি বা হ্রাসকৃত করহারের শর্তাবলি  (আয়কর আইন ২০২)

বাংলাদেশে ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট করদাতাদের জন্য আয়কর অব্যাহতি বা কর হাসকৃত করার সুযোগ রয়েছে। তবে এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক শর্ত মানা বাধ্যতামূলক। আয়কর আইন ২০২ অনুসারে কর অব্যাহতি পাওয়ার জন্য প্রযোজ্য নিয়ম ও বিধানাবলি নিয়ে এই ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।


🔹 কর অব্যাহতির শর্তাবলি

১। রপ্তানি করতে হলে ব্যবসায়ীর টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) থাকতে হবে এবং আয়কর আইনের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।

২। যদি কোনো আয় বছরে পরিবেশের নিয়ম ভাঙ্গা কারণে, সরকার আপনাকে জরিমানা করে, তাহলে সেই বছরের জন্য আপনাকে পূর্ণ হারে আয়কর দিতে হবে—কর ছাড় বা ছাড়পত্র পাওয়া যাবে না।

৩। এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কর ছাড় বা কম হারে কর যেটা দেওয়া হয়েছে, তা আয়কর আইন-এর ১২৩(২) ধারার সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে কর ছাড় বা কম হারে কর হিসেবে ধরা হবে না।

৪। রপ্তানি আয় ও করহার: কখন কোন হার প্রযোজ্য হবে

(ক) যদি কোনো করদাতার জন্য সরকার কোনো প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে করহার কমিয়ে ১২%–এর (বারো শতাংশ) নিচে নির্ধারণ করে, তাহলে পণ্য রপ্তানি থেকে যে আয় হবে, তাতে সেই কমানো করহারই প্রযোজ্য হবে।

(খ) আবার, যদি আয়কর আইনের কোনো নিয়ম অনুযায়ী আনুপাতিকভাবে করহার ১২%–এর নিচে নির্ধারিত হয়, তাহলে রপ্তানির আয়ের ওপর সেই কমানো আনুপাতিক করহারই প্রযোজ্য হবে।

(গ) তবে ওপরের (ক) এবং (খ) ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে, রপ্তানি আয়ের ওপর এই প্রজ্ঞাপনে যেটা করহার বলা হয়েছে, সেটাই প্রযোজ্য হবে—এবং এই হারে আর কোনোভাবেই ছাড় বা কমানো যাবে না।

৫। ধারা ১২৩(২) অনুযায়ী কর সনদ দেওয়ার সহজ নিয়ম

ধারা ১২৩(২) অনুযায়ী কর সনদ (Tax Certificate) দেওয়ার সময় করহার হিসাব করার জন্য নিচের নিয়ম মানা হবে:

কর হিসাব করার সূত্র:

  • করহার = (১২৩(১) ধারায় উল্লেখিত হার × ক / ১২) অথবা (১২৩(১) ধারায় উল্লেখিত হার × খ / ১২)

এখানে:

  • “ক” হচ্ছে সেই করহার যা ১২% এর নিচে।
  • “খ” হবে নিচের দুটি অবস্থার ওপর নির্ভর করে:

✅ অবস্থা ১: করদাতা যদি সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করে থাকেন

যেমন:

  • প্রতি লেনদেনে ৫ লাখ টাকার বেশি, এবং
  • বছরে মোট ৩৬ লাখ টাকার বেশি যেকোনো ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করেন,

তাহলে:

  • খ = (২৭.৫ × করযোগ্য রপ্তানি আয়ের শতকরা হার) ÷ ১০০

❌ অবস্থা ২: করদাতা যদি সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে না করে থাকেন

তাহলে:

  • খ = (৩০ × করযোগ্য রপ্তানি আয়ের শতকরা হার) ÷ ১০০

এই হিসাব অনুযায়ী যেই করহার নির্ধারিত হবে, তা সনদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

🧮 উদাহরণ  

মোঃ রফিকুল ইসলাম একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, যিনি স্থানীয়ভাবে হস্তশিল্প তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করেন। তাঁর বার্ষিক স্থায়ী আয় ২০ লাখ টাকা এবং তিনি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোনো সরকারি সহায়তা গ্রহণ করেননি।

তাঁর ক্ষেত্রে:

করদাতা হিসেবে তিনি রপ্তানিকারক হওয়ায়, তার আয়ের উপর ১২% হারে উৎসে কর কর্তন হতে পারে।

কিন্তু যদি তিনি নিয়মিত TIN বজায় রাখেন, আয়কর রিটার্ন জমা দেন এবং প্রয়োজনীয় সনদপত্র উপস্থাপন করেন, তাহলে এই করের হার কমানোর সুযোগ পেতে পারেন।

২৬ জুন ২০২৩ তারিখে জারিকৃত নতুন প্রজ্ঞাপন (এস.আর.ও নং-২১০-আইন/আয়কর ০৫/২০২৩) দ্বারা আগের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়েছে এবং তা ৩০ জুন ২০২৮ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—যেসব করদাতার (স্বাভাবিক ব্যক্তি, ফার্ম এবং হিন্দু অবিভক্ত পরিবার ছাড়া) একই খাতে দেশীয় আয় ও রপ্তানি আয় উভয়ই রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আয় ও ব্যয় আনুপাতিক হারে বিভাজন করতে হবে।